MMCH Information

Mymensingh Medical College Hospital

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইতিহাস।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইতিহাস।

05-Dec-2021
প্রতিষ্ঠানের নাম : ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
১। পটভূমি ঃ ১৮৮০ খ্রি: সময় থেকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার আগে ময়মনসিংহে স্বাস্থ্য সেবার কোনো প্রতিষ্ঠান ছিল না। যদিও তখনকার সময়ে ময়মনসিংহ একটি বৃহত্তর পরগনা ছিল। বহু পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের পর হাসপাতালের বর্তমান রূপ নেয়। তখনকার এলিট সমাজের উদ্যোগে প্রথম হাসপাতাল কেন্দ্রীক স্বাস্থ্য সেবা চালু হয় ডিসপেনসারি নামে ১৮৫৫ সালে ১লা সেপ্টেম্বর।

তখনকার সময়ে হাসপাতাল কার্যক্রম আরও বৃহত্তর করার জন্য ১৮৫৭ সালে বৃহত্তর ময়মনসিংহের মহারাজ সূর্যকান্ত আচার্যের মা মহারাণী লিলাদেবী থানার ঘাট এলাকায় চার বিঘা তিন কাটা জমি হাসপাতালের নামে দান করেন। হাসপাতাল নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৮৫৭ সালের ১৮ জুলাই।

১৯৫৮ সালে ময়মনসিংহের বহু গুণিজন হাসপাতালের জন্য দান করেন,
ক। রাজা জোগাথ কিশোর আচার্য -------- তার মায়ের নামে বিদ্যাময়ি মহিলা ওয়ার্ড
খ। মহারাজ সূর্যকান্ত আচার্য------------- ম্যাকেনজি চক্ষু ওয়ার্ড
গ। রাজা বাবু সতীশ চন্দ্র চৌধুরী--------- সতীশ আউট ডোর ডিসপেনসারি

পরবর্তীতে বিটিশ সরকার হাসপাতালের উন্নয়নের প্রয়োজনিয়তা উপলদ্ধি করে তথকালিন বাংলার গভর্ণর মি. লিটন মেডিকেল স্কুল চালু করেন ১৯২৪ সালের ১৯ ফ্রেব্রæয়ারি। যা পরবর্তীতে ১৯৬২ সালে “লিটন মেডিকেল স্কুল” থেকে “ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ” হিসাবে যাত্রা শুরু করে।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ৩২ জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে ১৯৬২ সালেগ-০১ব্যাচের মাধ্যমে প্রথম এমবিবিএস কোর্স চালু হয়। ১৯৭২ সালে ৫০০ রোগীর জন্য ৮৪ একর জমির উপর চরপাড়ায় হাসপাতাল কার্যক্রম শুরু হয়। মেডিসিন, সার্জারী, গাইনি ও অর্থপেডিকস্ বিভাগ চালু হয় ১৯৭৯ সালে। ফ্যামিলি প্ল্যানিং মডেল ক্লিনিক চালু হয় ১৯৮১ সালে। সিসিইউ চালু হয় ১৯৮৮ সালে। নতুন পোস্ট গ্রেজুয়েট লাইব্রেরি চালু হয় ২০০৯ সালে।

চরপাড়ায় ইন্টার্নরনিদের জন্য ইন্টার্নি হোস্টেল, ডক্টরস কোয়ার্টার, অন্যান্য স্থাপনা প্রতিষ্ঠিত হয়। মাসকান্দায় ৪র্থ শ্রেণি কর্মচারীদের জন্য কোয়ার্টার নির্মাণ হয়।

২০১৩ সালে ৫০০ শয্যা যুক্ত হয়। যা উদ্বোধন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

কালাজ¦র রির্চাস সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হয় এসকে হাসপাতালে ২০১২ সালে, বিডিএস কোর্স চালু হয় ২০১২ সালে, ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার চালু হয় ২০১৭ সালে, বঙ্গবন্ধু পার্ক চালু হয় ২০১৭ সালে, ডায়ালেসিস সেন্টার চালু হয় ২০১৮ সালে, বার্নপ্লাস্টিক সার্জারি, ইউরোলজি বিভাগ, NICU, বাংলাদেশে প্রথম থ্যালাসেমিয়া সনাক্ত করার জন্য ইলেক্টফরেসিস চালু হয় ২০১৮ সালে, “মুজিব বর্ষ” উদ্যাপন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আর্কাইভ স্থাপন করা হয় ২০২০ সালে, রিয়েলটাইম 3D ইকোকাডিওগ্রাম চালু হয় ২০২১ সালে।

২। প্রতিষ্ঠাকাল :২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৬২
৩। পরিচিতি ও কার্যক্রম :ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল একটি টারশিয়ারি লেভেলের একাডেমিক হাসপাতাল।
৪। সেবা কার্যক্রম :বর্তমানে মোট ৩৩টি বিভাগ/ওয়ার্ডে প্রতিদিন গড়ে ২৪০০ হতে ২৫০০ রোগী অন্ত:বিভাগে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে। বহি বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৩০০০ থেকে ৪০০০ রোগী সেবা গ্রহণ করছে।

আউটডোরে অটিষ্টিক বাচ্চাদের জন্য শিশু বিকাশ কেন্দ্র, টিকাদান কেন্দ্র, পরিবার পরিকল্পনা পরামর্শ ও সেবাদান কেন্দ্র। য²া রোগীদের জন্য ডটস্ কর্নার ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য “ডায়াবেটিস সেন্টার” চালু করা হয়েছে। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আগত সকল রোগীদের জরুরী বিভাগে দ্রুত স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসার জন্য "One Stop Service" চালু করা হয়েছে। ভর্তিকৃত রোগীদের একশত ভাগ ঔষধ হাসপাতাল থেকে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জরুরী প্রয়োজনে ঔষধ প্রাপ্তির জন্য“ দিবারাত্রি ফার্মেসী ”হাসপাতালে প্রশাসনিক ভবনে স্থাপন করা হয়েছে। রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা সহজ লভ্য করার লক্ষ্যে চারটি স্যাটেলাইট প্যাথলজী ল্যাব চালু করা হয়েছে। নিউনেটলজী বিভাগে NICU ও SCANU সেবা চালু আছে। নেফ্রলজী বিভাগে ২৭ টি ডায়ালাইসিস মেশিন স্থাপন করে পূর্ণাঙ্গ ডায়ালাইসিস সেন্টারে তিন বেলা ডায়ালাইসিস সেবা চালু করা হয়েছে। হেমাটোলজি বিভাগে থ্যালাসেমিয়া সহ বিভিন্ন রোগ নিরুপনের জন্য হিমোগ্লোবিন ইলেট্রোফরেসিস চালু করা হয়েছে। নিউরো মেডিসিন বিভাগে NCV চালু করা হয়েছে। ইউরোলজি বিভাগে আধুনিক যন্ত্র দিয়ে কিডনির পাথর অপারেশন চালু করা হয়েছে। কার্ডিওলজি বিভাগকে আধুনিকায়ন করে ইনভেসিভ,নন ইনভেসিভ কার্ডিওলজি ল্যাব এবং কার্ডিয়াক এনজিওগ্রাম,এনজিওপ্লাষ্টি করা শুরু হয়েছে। রিয়েলটাইম 3D ইকোকাডিওগ্রাম চালু করা হয়েছে। হাসপাতালের ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগে অর্থোসিস এবং প্রস্থেসিস আউটডোর ফিজিওথেরাপীর সকল সুবিধা সহ আর্টিফিশিয়াল লিম্ব ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। ডায়নামিক ফুটড্রপ সুল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। হাসপাতালে নিরাপত্তার স্বার্থে মোট ৩০০টি সি সি ক্যামেরা সেট করা হয়েছে। অটোমেশন কার্যক্রমের আওতায় বিভিন্ন রোগীর টেলি মেডিসিন ও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চিকিৎসা প্রদান করা চালু হয়েছে। পৃথক আইটি শাখা খোলা হয়েছে। তথ্য আদান প্রদান ও অভিযোগ সমাধানের লক্ষ্যে ওয়েব সাইটের মাধ্যমে অভিযোগ প্রদানের ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।

“মুজিব বর্ষ” উদযাপন উপলক্ষে বর্ষব্যাপি কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ইতি মধ্যে “বঙ্গবন্ধু আর্কাইভ ” স্থাপন করা হয়েছে। এখানে ৩০০ এর অধিক বই ও বঙ্গবন্ধুর ভাষণ প্রামান্যচিত্র, জীবনী এর অডিও ভিজুয়াল ব্যবস্থা রয়েছে। ইমার্জেন্সীতে “মুক্তি যুদ্ধ কর্ণার” স্থাপন করা হয়েছে। করোনা মহামারী মোকাবিলায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রথম থেকেই সফলতার সাথে চিকিৎসা নিশ্চিত করে চলছে। এখানে আলাদা ফ্লু কর্ণার, স্যাম্পল বুথ, ট্রায়াজ সিষ্টেম সহ ডেডিকেটেড কোভিড ইউনিট চালু রয়েছে।২২ টি। ICU ৪৩ টি HFNC সহ ২২০ টি করোনা রোগীর বেড এর সাথে আরো ২৫০ টি করোনা বেড চালু করা হয়েছে। ইউনিটের চিকিৎসা পদ্ধতি প্রতিনিয়ত আপডেট করা হয়। করোনা রোগীর সকল তথ্য অনলাইনে সংরক্ষন করা হয়। ভিডিও কনফারেন্স এর মাধ্যমে রোগীর জন্য বোর্ড গঠন ও চিকিৎসা পর্যালোচনার মাধ্যমে রোগীরজন্য বোর্ড গঠন ও চিকিৎসা পর্যালোচনা করা হয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণের সমন্বয়ে একটি কোভিড গাইনী,সার্জারী অপারেশন থিয়েটার পৃথকভাবে চালু রয়েছে।

৫। অবকাঠামোগত উন্নয়নঃ
২০১৩ সালে ৮তলা বিশিষ্ট নতুন ভবন নির্মাণ।
পুরাতন বিল্ডিংকে রেট্রোফিটিং করা হয়।
মাসকান্দায় ৪র্থ শ্রেণি কর্মচারীদের জন্য ৪টি ৬তলা বিশিষ্ট স্টাফ কোয়ার্টার নির্মাণ।
চরপাড়ায় ডাক্তারদের জন্য ৪তলা বিশিষ্ট ১টি স্টাফ কোয়ার্টার নির্মাণ।
২টি বিদ্যুৎ সাবস্টেশন নির্মাণ।

এছাড়াও নির্মাণাধিন আছেঃ
১৭তলা বিশিষ্ট ক্যান্সার হাসপাতাল।
চরপাড়া স্টাফ কোয়ার্টার সংলগ্ন ম্যাল্টিপারপাস ভবন।
ডায়াগোনস্টিক নির্মাণাধীন ভবন।

৬। উন্নয়মূলক কর্মকান্ডঃ
=>  কনফারেন্স হল আধুনিকায়ন করণ।
=>  অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত একটি ভিডিও কনফারেন্স হল নির্মাণ।
=>  ওয়ান স্পট সার্ভিস চালুকরণ : অত্যাধুনিক বেড সম্বলিত অব্জার্বেশন ওয়ার্ড-১৬ বেড, ডে-কেয়ার হাসপাতালে ৬টি বেড, জি.এ সুবিধা সম্বলিত ক্যাজুয়ালিটি ওটি, ডিজিটাল এক্সে, আল্ট্রাসনোগ্রাম, ই.সি.জি, প্যাথলজি ও জরুরী বায়োকেমিকেল পরীক্ষা-নিরীক্ষা যা ২৪ ঘন্টা চালু থাকে।
=>  অত্যাধুনিক ডায়াবেটিক ক্লিনিক চালু করণ।
=>  হাসপাতালের ৪টি জায়গায় সার্বোক্ষনিক প্যাথলজি সেবা চালুকরণ।
=>  নবনির্মিত ভবন সহ সকল বিভাগ/ওয়ার্ডে অক্সিজেন সরবরাহ পাইপ লাইনের আওতায় আনা।
=>  সি.সি.ইউ রোগীদের তাৎক্ষণিক বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য একটি অত্যাধুনিক ইমার্জেন্সী ল্যাব চালু করা হয়েছে (২৪ ঘন্টা খোলা থাকে)।
=>  জরুরী বিভাগের রোগীদের আসা যাওয়া ও চিকিৎসার সুবিধার্থে একটি নতুন শেড স্থাপন করা হয়েছে।
=>  রোগীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য জরুরী বিভাগের সম্মুখে একটি বিকল্প রাস্তা তৈরী ও চালু করা হয়েছে।  স্টোর ভবনের সম্মুখে বঙ্গবন্ধু উদ্যান (পার্ক) স্থাপন ও চালু করা হয়েছে।
=>  আনসারদের জন্য নতুন আবাস স্থল নির্মাণ ও পুরানো ভবনের সংস্কার ও পানির পাম্প, গ্যাসলাইন সংযোগ দেওয়া হয়েছে। 

৭। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল “হেলথ মিনিষ্টারস” এ্যাওয়ার্ড পেয়েছে।

        (ডাঃ মোঃ ওয়ায়েজ উদ্দীন ফরাজী)
উপ-পরিচালক
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
ময়মনসিংহ।